
উত্তম কুমার মোহন্ত,ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোড়ক মন্ডল আশ্রয়ন প্রকল্প আবাসন নির্মাণের ২২ বছর অতিবাহিত হলেও সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ আবাসস্থলে বসবাসের অনুপযোগী। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ উপজেলা প্রশাসন একাধিক বার সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনও পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন বাসিন্দারা। বর্তমানে ৫৫ টি পরিবারের নানান দূর্ভোগে বসবাস।
জানা যায়, উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা গোড়ক মন্ডল এলাকায় গৃহহীন, ভূমিহীন ছিন্নমূল পরিবারের জন্য ২০০৩ সালে নির্মিত হয় আশ্রয়ন ও গুচ্ছ গ্রাম প্রকল্প (আবাসন)। সরকার খাস জমির উপর থাকার ঘর নির্মাণ করে ২৩০ টি ভুক্তভোগী পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করেন।সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকেন।মাত্র ৬-৭ বছরের মধ্যে আবাসন প্রকল্পটির টিন সেটের ঘর গুলির চাল, বেড়া মরিচা ধরে ফুটো হয়ে যাওয়ায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
২০১৭ সালে ভয়াবহ বন্যার কয়েকটি ব্যারাক দুমরে মুচড়ে মাটিতে নুইয়ে পরে যাওয়ায় পরবর্তিতে আর বসবাসের যোগ্য হয়ে উঠেনি। ঘরের চাল ফুটো,বেড়া ফুটো একটু বৃষ্টি হলে ঘরের ভিতরে পানি প্রবেশ করে,শীতকালে তীব্র ঠাণ্ডা হিমেল হাওয়ায় শিশির বিন্দু ঘরে প্রবেশ করে সবে মিলে নানান সমস্যায় জর্জরিত আবাসন টি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ায় অসহনীয় দুর্ভোগ সহ্য করতে না পেরে ইতিমধ্যে ১৭৫ টি পরিবার আবাসন স্থল ত্যাগ করে অন্য জায়গায় ঠাঁই নিয়েছে।২২ বছর আগে নির্মাণ করা এই সব ঘর দরজা টয়লেট সংস্কারের অভাবে ঘরের ছাউনির টিন,বেড়া মরিচা ধরে ফুটো হয়েছে সবকিছু ভেঙে দুমরে মুচড়ে গিয়ে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ভঙ্গুর আবাসন টিতে বর্তমানে ৫৫ টি পরিবার প্রকৃতির সাথে নানা প্রতিকূলতা ও পোকামাকড়ের সাথে যুদ্ধ করে চরম ভোগান্তিতে বসবাস করছেন। প্রতিটি ঘরের ছাউনির টিন ও বেড়ার টিন মরিচা ধরে বড় বড় ফুটো হয়ে গেছে একটু বৃষ্টি হলেই সেই ফুটো দিয়ে পানি ঘরে প্রবেশ করে বিছানা পত্র সহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানি থেকে একটু খানি রক্ষা পেতে টিনের চালের উপর পলিথিন ব্যবহার করছেন।বৃষ্টির দিনে মহিলারা ছাতা বা পলিথিন মাথায় দিয়ে গাছের শুকনো পাতা দিয়ে কোন মতে রান্না বান্নার কাজ সারছেন।
আবাসনের বাসিন্দা মোছাঃ জান্নাতি বেগম (৫৭) বলেন,হামার কষ্টের কথা কাইও শোনে না বাহে অল্প একনা বৃষ্টি হলেই ঘরের ভিতরে পানি ঢুকে বিছানা পত্র কাপড় চোপড় ভিজে যায় ইয়ার পরে ভিজি, ভিজি রান্না বান্নার কাজ করা এই বয়সে এত কষ্ট করি থাকতে আর মন চায় না।তাই তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানান, খুব তাড়াতাড়ি এই ঘরগুলো ভেঙে নতুন ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হোক। ভাঙাচোরা আবাসনে একই কষ্ট সহ্য করে সংসার সহ রান্না বান্নার কাজ করে দিন পার করছেন মোছাঃ আনোয়ারা বেগম, মোছাঃ ফাতেমা বেগম,ও কনা রানী সহ অনেকেই।
আবাসনের সভাপতি মোঃ মোন্নাফ হোসেন জানান,১০ থেকে ১২ বছর ধরে আবাসন টির সংস্কারের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি প্রতিশ্রুতি দিলেও পূর্ণস্কারের আর ব্যবস্থা নেননি।নানান দূর্ভোগের কারণে ইতিমধ্যেই ১৭৫ টি পরিবার আবাসন স্থল ত্যাগ করে অন্য জায়গায় চলে গেছেন। বর্তমানে বসবাসরত ৫৫ টি পরিবারের অন্য জায়গায় চলে যাওয়ার কোন জায়গা না থাকায় জোড়াতালি দিয়ে সকল দূর্ভোগ সহ্য কোনমতে বসবাস করছেন।তারা কতৃপক্ষের নিকট বিনয়ের সাথে অনুরোধ করেন অতি তাড়াতাড়ি আমাদের আবাসন টি পূর্ণ নির্মাণ করে দেওয়া হোক।
এবিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক, মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ জানান,গোড়ক মন্ডল আবাসনের দুরবস্থার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে, এই অর্থবছরে বরাদ্দ আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি আশাবাদী বরাদ্দ আসলেই সেখানকার বসবাসরত প্রত্যেকটি পরিবার কে পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।